নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিএনপি যুগ যুগ ধরে সন্ত্রাস করে আসছে। বিএনপি একটা সন্ত্রাসী দল আর জামায়াত হলো যুদ্ধাপরাধী দল। তাদের কথা কেউ শুনেনা। যারা বাসে আগুন দেয়, তাদের ধরে সেই আগুনেই ফেলে দিন।
গতকাল রোববার (১২ নভেম্বর) বিকেলে নরসিংদী মুছলেহ উদ্দিন ভূইয়া স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের কল্যাণ করার প্রত্যয় নিয়েই এদেশে ফিরে এসেছি। আওয়ামীলীগ জনগণের কল্যাণে কাজ করে আর বিএনপি ধ্বংস করে।
বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা কেউ থামিয়ে রাখতে পারবে না। দেশের জনগণের জন্য আমরা সব ধরনের উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছি। অপরদিকে, বিএনপি-জামায়াত করে যাচ্ছে আগুন সন্ত্রাস ও ধ্বংসের কাজ। তাদের কাজই হচ্ছে ধ্বংস করা, দেশকে পিছিয়ে নেওয়া।
ইসরাইলিরা ফিলিস্তিনের ওপর যে নির্মম হত্যাকান্ড চালাচ্ছে সেব্যাপারে বিএনপিরা কিছু বলে না। কারণ, ইসরাইলিরা যেভাবে ফিলিস্তিনিদের বাড়ি-ঘর-হাসপাতালে বোমা নিক্ষেপ করে তাদের নিধন করছে, বিএনপির সন্ত্রাসীরা ঠিক সেভাবে এদেশের সাধারণ মানুষের উপর হামলা করছে। এখন বলতে হয়
তারা ইসরাইলীদের জারজ সন্তান কি না?
প্রধানমন্ত্রী তাঁর পরিবার,স্বজনদের নির্মম হত্যকান্ডের স্মৃতি বিজড়িত কথা স্মরণ করে বলেন, প্রিয় নরসিংদীর ভাই ও বোনেরা আমার, ‘আমি আমার পিতা, মাতা, ভাই, পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা চাচা হারিয়েছি। আমরা দুই বোন ছাড়া পরিবারের সবাইকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমার কাছে আপনারা ছাড়া আর কেউ নেই। আমি যা করছি, আপনাদের জন্য, দেশের জনগণের জন্য করছি ।
তিনি বলেন, আমরা সকল শ্রেণি পেশার মানুষের জন্য সুবিধার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট থেকে শুরু করে দেশের সার্বিক উন্নয়নে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। কথা দিয়েছিলাম ঘরে ঘরে আলো জ্বলবে, আমরা সেই কথা রেখেছি। এখন দেশে শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধা গ্রহণ করা হচ্ছে। ভর্তুকি দিয়ে দেশের মানুষের জন্য খাদ্য পণ্য স্বল্প মূল্যে সরবরাহ করে যাচ্ছি।
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ২০০৭ সালে তারেক রহমান মুচলেখা দিয়েছিল আর কোনো দিন রাজনীতি করবেনা । এখন লন্ডনে পালিয়ে থেকে দেশে আগুন দিয়ে গাড়ি পোড়ার কথা বলে। তাকে আমি বলতে চাই ‘আরে বেটা তোর যদি সাহস থাকে তাহলে বাংলাদেশে আয়। দেখি তোর সাহস কত।
তিনি নরসিংদীতে উন্নয়নের ১০টি চিত্র তুলে ধরেন। নরসিংদীবাসীর প্রতি উদাত্ত্ব আহবান জানিয়ে বলেন, দেশের উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে আওয়ামীলীগকে আবারো নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে নরসিংদীর ৫টি আসনেই বিজয়ী করবেন।
একই সঙ্গে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের হুশিয়ারি করে বলেন, আমি যাকে মনোনয়ন দিবো তার পক্ষেই আওয়ামীলীগের প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে কাজ করতে হবে।
নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম তালেব হোসেন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি, নরসিংদী সদর আসনের এমপি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, শিবপুরের এমপি জহিরুল হক ভূইয়া মোহন, নজরুল ইসলাম এমপি, মহিলা আওয়ামী লীগের সভা নেত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি তামান্না নুসরাত বুবলি, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াছমিন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ।
জনসভার পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছেন নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা কাজী মোহাম্মদ আলী এবং নরসিংদী পৌর মেয়র আমজাদ হোসেন বাচ্চু।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এর আগে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় দেশের মেগা প্রকল্প এশিয়ার বৃহত্তম সার কারখানা হিসেবে খ্যাত ‘পলাশ-ঘোড়াশাল সার কারখানা’ উদ্বোধন করেছেন। এখন থেকে কারখানাটিতে পুরোদমে চলবে উৎপাদন। বছরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন এবং দৈনিক উৎপাদন ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন।
উদ্বোধনের পর সেখানে পলাশ উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আজকের এই প্রকল্পের পেছনে আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ জাপান ও চীনের সহায়তার জন্য আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই। একই সংগে ধন্যবাদ জানাই শিল্প মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে সেখানে বলেন, দেশের সারের চাহিদা পূরণের জন্য ২০১৪ সালে আমরা প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করি। দুটি পুরাতন সার কারখানা সংস্কার করে নতুন করে কারখানা নির্মাণ করার। সেই থেকে আমরা আজ কাংক্ষিত লক্ষ্যে পৌছতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, বিএনপির আমলে সারের জন্য কৃষক হাহাকার করতো । এমনকি সারের জন্য অনেক কৃষকের প্রাণ দিতে হয়েছিল।
আমরা তখনই প্রতিজ্ঞা করি যে, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় গেলে এদেশের কৃষকের দুঃখ দূর করবো। সেই লক্ষ্যে আমরা দেশের সারের চাহিদা পূরণের জন্য সব ধরণের ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। এখন সারের জন্য কোনো কৃষককে কষ্ট করতে হয় না।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমার কাছে দেশের স্বার্থ বড়, ক্ষমতা বড় নয়। আমরা যা-ই কিছু করছি তা সবই করছি দেশের স্বার্থে, দেশের জনগনের স্বার্থে।
শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন এর সভাপতিত্বে এই সুধি সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা ও পলাশ আসনের সংসদ সদস্য ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দীলিপ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মোঃ সাবিরুল ইসলাম, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, বিপিএম (বার)পিপিএম, বিসিআইসির চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান, প্রকল্প পরিচালক রাজিউর রহমান মল্লিক, জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম, পলাশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রবিউল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন ।
