নিজস্ব প্রতিবেদক
২০ অক্টোবর বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন নরসিংদী জেলার উদ্যোগে শিক্ষা সংস্কার ও শিক্ষকদের বিরাজমান সমস্যা নিরসনে নরসিংদী প্রেসক্লাবের সম্মুখে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ৭ দফা দাবী বাস্তবায়নে অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধানের বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।
বিক্ষোভ সমাবেশ চলাকালীন সময়ে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন নরসিংদী জেলা সভাপতি সহকারী অধ্যাপক মোঃ মকবুল হোসেন, আদর্শ শিক্ষক কলেজ পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুর রহমান, অধ্যক্ষ আদিল ভূ্ঞা, খোরশেদ আলম, শেখ আব্দুল মালেক, মাসউদ করীম, মজিবুল্লাহ খান, মাওলানা আব্দুল মোমেন, আসাদুল্লাহ, শফিকুল ইসলাম মুসা,মোঃ ইউসুফ , মোঃ সোলায়মান ইসলাম প্রমুখ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের সেক্রেটারি ওয়ালী উল্লাহ সরকার।

আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন এর পক্ষ থেকে শিক্ষা সংস্কার ও শিক্ষকদের বিরাজমান সমস্যা সমাধানে অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধান ও মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপিটি নিন্মরূপঃ
মাধ্যম: জেলা প্রশাসক, নরসিংদী
মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা,
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
সুদীর্ঘ সাড়ে পনের বছরের পতিত ফ্যাসীবাদ সরকারের জুলুম, নির্যাতন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সহস্রাধিক প্রাণ বিসর্জন, লক্ষাধিক আহত ও পঙ্গুত্ব বরণের বিনিময়ে অর্জিত ৫ আগস্ট ২০২৪ এর দ্বিতীয় স্বাধীনতার সূর্যোদয় অর্জন হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদদের প্রতি আমরা সশ্রদ্ধ সালাম ও মোবারকবাদ জানাচ্ছি এবং আহত বীরদের প্রতি আন্তরিক সহানুভূতি প্রকাশ করছি।
মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা,
বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন শিক্ষক সংগঠনগুলোর মধ্যে অনন্য এক শিক্ষক সংগঠন। বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক’ ফেডারেশন সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরির এক মহান ভিশনকে সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছে। সামাজিক অবক্ষয় রোধ, সমাজ পরিবর্তন পরিগঠন ও জীবনমান উন্নয়নে শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষার্থী, শিক্ষকমণ্ডলী ও শিক্ষাক্রম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটা জাতির সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিনির্মাণের ক্ষেত্রে শিক্ষাব্যবস্থা প্রধান হাতিয়ার।
আমরা গভীর ভাবে লক্ষ্য করছি যে, স্বাধীনতাত্তোর বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাসীন সরকারের উদাসীনতা, বিশেষ গোষ্ঠীর অপতৎপরতা এদেশের শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষানীতি, শিক্ষাসহায়ক পরিবেশ ও শিক্ষাক্রমের সুষ্ঠ বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করেছে। একদিকে পাশ্চাত্য সভ্যতার আগ্রাসন এবং অপরদিকে ভারতীয় আধিপত্যবাদের প্রভাব এ দেশের নিজস্ব শিক্ষা কাঠামো তৈরিতে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিগত পতিত ফ্যাসিবাদী সরকার ২০১০ সালে একটি ফ্যাসিবাদী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে ২০২২ সাল থেকে শিক্ষাক্রমে বাস্তবায়ন শুরু করে। উক্ত শিক্ষাক্রমে নৈতিক শিক্ষাকে গুরুত্বারোপ না করে তদস্থলে বিদয়াত এবং শিরকিয়াতের মত বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। উক্ত শিক্ষাক্রমে জীবন ও কর্মমুখী নৈতিক শিক্ষাকে অগ্রাধিকার না দিয়ে বরং আধুনিকতার দোহাই দিয়ে নৈতিক মূল্যবোধ বিমুখ শিক্ষাক্রম চালু আছে।

সম্মানিত প্রধান উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টা
বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন মনে করে, একটি জাতিকে গঠন করতে হলে তার শিক্ষা ব্যবস্থা যুগোপযোগী ও নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন হওয়া চাই। স্বাধীনতার পর থেকে একটি টেকসই যুগোপযোগী শিক্ষা নীতিমালা ও কারিকুলাম প্রণয়ন ছিল একটি মৌলিক কাজ। বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন বিপ্লব পরবর্তী মানুষের চাহিদা, আশা-আকাঙ্খা ও যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ণের তাগিদে উক্ত সংস্কার প্রস্তাব ও দাবীসমূহ উপস্থাপন করছে। শিক্ষক ফেডারেশন আশা করে, এই সংস্কার প্রস্তাব গৃহীত হলে শিক্ষা ব্যবস্থার মৌলিক ত্রুটি দূর হবে যা সৎ, দক্ষ, আদর্শ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরীতে ভূমিকা রাখবে।
স্বারকলিপি প্রদানের বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের দাবিসমূহ-
১) বাড়ি ভাড়া ২০% করতে হবে এবং পর্যায়ক্রমে ৪৫%।
২) চিকিৎসা ভাতা ১৫০০ টাকা দিতে হবে।
৩) শতভাগ উৎসব ভাতা প্রদান করতে হবে।
৪) প্রস্তাবিত ১০৮৯ ইবতেদায়ি মাদরাসা এমপিওভুক্ত করতে হবে।
৫) নন-এমপিও শিক্ষকদের চাকুরি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে হবে।
৬) অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বকেয়া ভাতা অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে।
৭) স্বৈরাচারী সরকারের আমলে যেসকল এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা তাদের পাওনা বুঝে পায়নি তাদের পাওনাদি নির্বাহী আদেশে পরিশোধ করতে হবে।
সম্মানিত প্রধান উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয়, বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন এর উল্লেখিত প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করতে আপনার সদয় সহানুভূতি কামনা করছি।
প্রফেসর ড.এম.কোরবান আলী
সভাপতি
বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন।





