নিজস্ব প্রতিবেদক
নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল আহেদ এর বিরুদ্ধে নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অভিভাবকেরা বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি , জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করেছেন।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফলে সারাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যখন টাল মাতাল তখন নানান অনিয়ম দুর্নীতি স্বেচ্ছাচারিতা করেও নরসিংদী সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল আহেদ আছেন বহাল তবিয়তে। নরসিংদীর স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেই নানান অযুহাতে প্রায়ই বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দীর্ঘদিন পর পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী অনুষ্ঠানেও তিনি ছিলেন না। তিনি জ্যৈষ্ঠতা লঙ্গণ করে দায়িত্ব দিয়ে যান জুনিয়রকে। তিনি ছুটি নেয়ার বিষয়টি ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকেও অবহিত করেন না।
অভিযোগ সমূহ:
তিনি বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকেন না। ফলে প্রশাসনিক কাজে কোন সহযোগিতা পাই না। জানা গেছে পূর্বের কর্মস্থলেও তিনি এ রকম অনিয়মিত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারীরও অভিযোগ ছিল।
তিনি ছাত্রীদের মাঝে নিম্নমানের টিফিন বিতরণ করছেন। এ বিষয়ে আমাদের মেয়েরা ও আমরা বিভিন্ন সময়ে তার কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাইনি। বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম যে, তিনি টিফিন সরবরাহকারীকে বাদ দিয়ে টিফিন ফান্ডের কোনো কমিটি না করে নিজেই একা একা টিফিন কিনে ব্যবসা করছেন। প্রতিটি ৬/=টাকা থেকে ৮/= টাকার টিফিন কিনে ১২/= টাকা হারে বিল করছেন। টিফিন বিষয়ে ছাত্রীদের ও অভিভাবকদের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
তিনি বিদ্যালয়ে যোগদানের পর শিক্ষার্থীদের জন্য ডায়রী ছাপিয়েছেন। প্রতিটি ডায়রীর মূল্য নিয়েছেন ১৩০/= (একশত ত্রিশ) টাকা করে। যা বিদ্যালয় সৃষ্টির পর থেকে অদ্যবধি সবোর্চ্চ দামের। কিন্তু ডায়রীগুলো এতই নিম্নমানের যে, এগুলো ব্যবহারের পূর্বেই ছিড়ে পড়ে যাচ্ছে। তার ছাপানো ডায়রীর দাম সর্বোচ্চ ৫০ টাকা হতে পারে।
বিদ্যালয়ের ম্যাগাজিন ছাপানোর জন্য তিনি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে দরপত্র আহবান করেছেন। কিন্তু কোনো দরপত্র বিদ্যালয়ে পাওয়া যায়নি বা জমা হয়নি। এদিকে দরপত্র জমাদানের সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। বিষয়টি আমরা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) মহোদয় কে জানালে তিনি প্রধান শিক্ষক কে ম্যাগাজিন ছাপানোর কাজ বন্ধ রাখতে বললেও তিনি তা ছাপানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ফাণ্ডের অর্থ তিনি ভূয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে উত্তোলন করে যাচ্ছেন। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফান্ডের স্থিতি এখন প্রায় শূণ্যের ঘরে।
বিদ্যালয়ের বিগত কয়েক বছরের বিভিন্ন পরীক্ষার উত্তরপত্র, পাঠ্য পুস্তক ও অন্যান্য কাগজ তিনি নিজেই একা বিক্রি করেন। উক্ত সম্পূর্ণ অর্থ তিনি সরকরি কোষাগারে জমা না দিয়ে নিজেই আত্মসাৎ করেছেন।
বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অকেজো লোহা, দরজা, বেঞ্চ, গেট ইত্যাদি বিক্রি করে রাতের আধারে ট্রাকের মাধ্যমে সরিয়ে ফেলেন। বিক্রিত পুরাতন মালামাল বাবদ প্রাপ্ত অর্থ তিনি সরকরি কোষাগারে জমা না দিয়ে নিজেই আত্মসাৎ করেছেন।
বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে একটি অকেজো, পরিত্যাক্ত টিনশেড ঘর ছিল। তিনি ঐ ঘরটি ১,২০,০০০/= (এক লক্ষ বিশ হাজার) টাকায় নিলামে বিক্রি করেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু নিলাম বাবদ প্রাপ্ত অর্থ তিনি সরকরি কোষাগারে জমা না দিয়ে নিজেই আত্মসাৎ করেছেন।
বর্তমানে তিনি বিদ্যালয়ের উচ্চমান সহকারি নাজমা বেগম এবং অফিস সহকারি জেসমিন এর সহায়তায় বিদ্যালয়ের বিভিন্ন তাঁর ফান্ড হতে ভূয়া ও ভৌতিক বিল ভাউচারের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করছেন। কেউ কিছু বললে তিনি স্বগর্ভে বলেন যে, স্বাক্ষরে টাকা ওঠে। তাই তাকে কারোর নিকট জবাবদিহি করতে হবে না।
তিনি নিয়ম বহির্ভুতভাবে বিভিন্ন পরীক্ষার একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট, সার্টিফিকেট, প্রসংশাপত্র বিতরণ করার সময় ছাত্রী প্রতি ২০০/= টাকা করে আদায় করেন। এখানে উল্লেখ্য যে, শুধু এসএসসি— ২০২৪ ব্যাচের ছাত্রীদের নিকট হতেই তিনি প্রায় ৬০,০০০/— (ষাট হাজার টাকা) আদায় করে নিজে একাই আত্মসাৎ করেছেন।
বিদ্যালয়ে বিভিন্ন কক্ষের পুরাতন প্রায় ৩০টি বৈদ্যুতিক পাখা তিনি রাতের আধারে বিক্রি করেন। এ ব্যাপারে তাকে সহায়তা না করার কারণে বিদ্যালয়ের বে সরকারি পিয়ন মোঃ সোহেল মাহমুদ ও নৈশ প্রহরী ইন্দ্রজিত কে চাকুরি হতে অব্যাহতি দিয়ে বের করে দিয়েছেন।
বর্তমানে প্রতিবার তিনি ঢাকা যাওয়ার সময় উনার ব্যাগ ভর্তি করে বিদ্যালয়ের প্লেট, বাটি, চামচ. তোয়ালে ইত্যাদি নিয়ে যাচ্ছেন।
বিদ্যালয়ের নামে সরকারি বরাদ্দের সম্পূর্ণ অর্থ তিনি উত্তোলন করে কোনো মালামাল না কিনে উক্ত অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
বিভিন্ন পরীক্ষার সম্মানী হতে কর্তনকৃত উৎসে কর সরকারি কোষাগারে জমাদানের নির্দেশ থাকলেও তিনি তা জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।
উপরোক্ত অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ গুলো সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।